অনিয়মের অভিযোগে বহিস্কৃত চৌদ্দগ্রামে ওলামালীগ নেতার নেতৃত্বে মাদরাসা দখলের চেষ্টা!


admin প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪, ৯:৫৪ পূর্বাহ্ন /
অনিয়মের অভিযোগে বহিস্কৃত চৌদ্দগ্রামে ওলামালীগ নেতার নেতৃত্বে মাদরাসা দখলের চেষ্টা!

চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি:
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ওলামালীগ নেতা মাওলানা আবুল কাছেমের নেতৃত্বে একটি মাদরাসা দখলের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার শ্রীপুর ইউনিয়নের লহরী বায়তুশ শরফ মাদরাসা এলাকায়। মাওলানা আবুল কাছেম ওই ইউনিয়নের ওলামালীগের সভাপতি।

মাদরাসা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ২ ডিসেম্বর মাদরাসার সুপার মাওলানা আবুল কাছেম প্রায় ১৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বহিস্কৃত হয়েছিলেন। বহিস্কার প্রতিরোধ করতে তিনি ২০১০ সালের ৩০ মে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। ছলছাতুরির আশ্রয় ধরে আবুল কাছেম বহিস্কারের আদেশ ও পদত্যাগপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মাদরাসার তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম ২০১০ সালের ২৪ জানুয়ারি আবুল কাছেমের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে তিনি দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়।
মাদরাসা সূত্রে আরও জানা গেছে, মাওলানা আবুল কাছেম ১৯৮৭ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে মাদরাসার সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দায়িত্বপ্রাপ্তকালে তিনি শিক্ষক-কর্মচারিদের অনুদানের ১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, পরীক্ষার ফি বাবদ ৬ লাখ ১৩ হাজার ৪২৭ টাকা, ২০০৭ সালে টিউশন ফি বাবদ ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৯০ টাকা, এলাকাবাসীর অনুদানের ৭০ হাজার টাকা, নির্বাচনী পরীক্ষার ফি ৫৪ হাজার ৮৪০ টাকা, শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৪৫ টাকা, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের থেকে দানকৃত ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৮২০ টাকা, মাদরাসা শিক্ষকদের ভবিষ্যত তহবিল থেকে ১২ হাজার টাকা, আরও একটি অনুদানের ১৩ হাজার টাকা, মাদরাসার এফডিআরের ১৪ হাজার ২৫৯ টাকাসহ ১৬ লাখ ৯০ হাজার ২৮১ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মাদরাসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সুপার আ.ক.ম ইব্রাহিম ভুঁইয়া ২০১২ সালের ৬ আগস্ট কুমিল্লার আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি ২০১৩ সালে তদন্ত করে চৌদ্দগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক সামছুদ্দিন অভিযোগপত্র প্রদান করেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
অপরদিকে সুপার মাওলানা আবুল কাছেম উচ্চতর আদালত থেকে তাকে বরখাস্ত এবং তার পদত্যাগপত্র অবৈধ বলে রায় পায়। রায়ের বিরুদ্ধে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ চলতি বছরের ১১ জুন সুপ্রীমকোর্টে আপিল করে। আপিল তথ্যটি গোপন রেখেই মাওলানা আবুল কাছেম তাকে আ’লীগ সরকারের আমলে হয়রানী করছে অজুহাত দেখিয়ে সোমবারে শসস্ত্র বাহিনী নিয়ে মাদরাসা দখলের চেষ্টা করলে এলাকাবাসী তা প্রতিরোধ করে।
মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এমদাদুল হক শাহী বলেন, মাদরাসার তৎকালিন মাওলানা আবুল কাছেম দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তখনকার মাদরাসার সভাপতি মীর খায়রুল আলম তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। দীর্ঘ তদন্তে তিনি দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এরই মধ্যে ২০১০ সালে মাওলানা আবুল কাছেম পারিবারিক সমস্যা দেখিয়ে সুপার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেও তিনি পদত্যাগ এবং বরখাস্তের আদেশের বিরুদ্ধে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার ইব্রাহিম ভুঁইয়া মাওলানা আবুল কাছেমের প্রায় ১৭ লাখ টাকা দুর্নীতির অভিযোগে আদালতে আরও একটি মামলা দায়ের করেন। দুইটি মামলাই উচ্চতর আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলা দুইটি বিচারাধীন থাকা স্বত্তেও আবুল কাছেম শসস্ত্র বাহিনী নিয়ে সোমবার মাদরাসাটি দখলের চেষ্টা করে। যা এলাকাবাসী প্রতিরোধ করে।

এমদাদুল হক শাহী আরও বলেন, সুপার আবুল কাছেম এ ১৭ বছর ধরে ওলামালীগের শ্রীপুর ইউনিয়ন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাকে আ’লীগ সরকারের আমলে কেউ হয়রানী করেনি।
অভিযুক্ত মাওলানা কাছেম বলেন, ‘মাদরাসাটি আমার পৈত্রিক সম্পত্তির উপর অবস্থিত। আমাকে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। আমি আদালতের রায় পাওয়ার পরে দায়িত্ব গ্রহন করতে মাদরাসায় গিয়েছি’।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘আবুল কাছেমের পক্ষ থেকে একটি আবেদন পেয়েছি। তবে এ ব্যাপারে আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করি নাই’।