৩ মাস পরেও শিক্ষার্থীদের ট্যুরের টাকার হিসেব দেননি সদস্য সচিব


admin প্রকাশের সময় : মে ৯, ২০২৪, ৮:২৩ পূর্বাহ্ন /
৩ মাস পরেও শিক্ষার্থীদের ট্যুরের টাকার হিসেব দেননি সদস্য সচিব

কুবি প্রতিনিধি:

প্রায় তিন মাস পার হয়ে গেলেও এখনো শিক্ষার্থীদের ট্যুরের টাকার হিসেব দিতে পারেননি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক ও ট্যুর আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব আবু ওবায়দা রাহিদ। কমিটির বাকি সদস্যদের অভিযোগ কাউকে অবগত না করে নিজের ইচ্ছামতো ট্যুরের সকল পরিকল্পনা করেন তিনি। ফলে শিক্ষার্থীদের টাকার কোন দায় নিচ্ছে না বিভাগ। টাকা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় ট্যুরের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার যাত্রা করার কথা থাকলেও ৭ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজার জেলা প্রশাসন মিয়ানমার সীমান্তে অস্থির পরিস্থিতির কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটকবাহী সকল জাহাজ চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ১১ ফেব্রুয়ারী সকাল ১১টায় একাডেমিক কমিটির সভায় ট্যুর স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এই ট্যুরের জন্য শিক্ষার্থীদের থেকে ৪ হাজার ৫ শত টাকা চাঁদা নেওয়া হয়েছে। ১২ থেকে ১৭ তম ব্যাচ পর্যন্ত মোট ৬টি ব্যাচ থেকে ২ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। এই টাকার মধ্যে কর্ণফুলী এক্সপ্রেসে আসন ও ব্লু মেরিন রিসোর্টে রুম বুকিংসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ব্যয় হয়েছে ২ লক্ষ ২১ হাজার ৯ শত ১০ টাকা। অবশিষ্ট ছিল ৪০ হাজার ৯০ টাকা। এরপর ট্যুর স্থগিত হলে কক্সবাজার গিয়ে কিছু টিকিট বিক্রি করে ছাত্র প্রতিনিধিরা। টিকিট বিক্রি ও কর্ণফুলী এক্সপ্রেস থেকে ৮ হাজার ৩ শত টাকা ফেরতসহ মোট ৭৫ হাজার ১২ টাকা অবশিষ্ট থাকলেও বাকি প্রায় ১ লক্ষ ৮৬ হাজার ৯৮৮ টাকার কোন হিসেব দিতে পারেননি সদস্য সচিব। যেখানে রয়েছে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের টাকা। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারী মিয়ানমার সীমান্তে বিরোধের কারণে সেন্টমার্টিন নৌ রুটে জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও একক সিদ্ধান্তে সদস্য সচিব জাহাজ ও রিসোর্ট বুকিং নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছে বিভাগের শিক্ষকরা। সদস্য সচিবের শিক্ষকদের সাথে সমন্বয়হীনতা ও নিজ উদ্যোগে সব সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এই ট্যুরে যেতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা এমনটাই জানিয়েছে একাধিক শিক্ষক। এরপর ১১ ফেব্রুয়ারী সুপারিশের জন্য উপাচার্যের দ্বারস্থ হন আবু ওবায়দা রাহিদ। সেখানেও পাননি ট্যুরের অনুমতি। ট্যুরের বিস্তারিত হিসেব জানার জন্য তাঁকে বিভাগ থেকে চিঠি দেওয়া হলে তিনি সেই সেটার উত্তর দেননি। পরবর্তীতে প্রায় দুই সপ্তাহ পর আবার চিঠি দেওয়া হলে তিনি বিভাগের অফিস সহকারীকে দিয়ে কোন প্রকার স্বাক্ষর ছাড়া চিঠির অসম্পূর্ণ উত্তর পাঠান। যেখানে কোন কমিটির সদস্যদেরও স্বাক্ষর ছিল না।

ট্যুরের অর্থ কমিটির দায়িত্বে ছিলেন ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এ এস এম ইউসুফ। তিনি বলেন, আমরা ১২ তম ব্যাচ শুধুমাত্র আয়োজক হিসেবে ছিলাম। শিক্ষার্থীদের টাকা পয়সার ব্যাপার বিভাগ দেখবে।

১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সুব্রত বলেন, এটা একটা সিলি ম্যাটার। আমি মন্তব্য করবো না এই বিষয়ে।

১৪ তম ব্যাচের প্রতিনিধি আবরার বিন মোস্তফা বলেন, আমি এখানে কোন প্রতিনিধি ছিলাম না। আরেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সে না আসায় আমি ট্যুরের জন্য টাকা তুলে বিভাগে জমা দিয়েছি এবং বাকি টাকা স্টুডেন্টদের দিয়ে দিয়েছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ১৪ তম ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, টিউশনের জমানো টাকা ট্যুরের জন্য দিয়েছি। এখন এই টাকার কোন হদিস নেই। ট্যুরও হলো না। এখন আমরা কবে টাকা পাব সেটারও ঠিক নেই।

১৫ তম ব্যাচের প্রতিনিধি মো: হান্নান বলেন, আমি সিআর হিসেবে ব্যাচের সবাই আমার কাছে টাকা জমা দিয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। এখন ওরা সবাই টাকার জন্য আমাকে নক দেয় কিন্তু আমি ওদেরকে কোন কিছু বলতে পারি না।

ট্যুরের আহবায়ক ড. মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ট্যুরের আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে কমিটির সদস্যরা অবগত ছিল না। সদস্য সচিব এককভাবে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সরকার সেন্টমার্টিন যাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার পর আমরা বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ে বিষয়টি তুলে ট্যুর স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেই।

সদস্য আফজাল হোসাইন বলেন, ট্যুর পরিস্থিতির কারণে একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ের মাধ্যমে স্থগিত করা হয়েছে। আমি এখানে শুধু নামমাত্র সদস্য ছিলাম। ট্যুর কবে হবে, কিভাবে হবে, কতজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী যাবে, টাকা কোথায় দিচ্ছে, কিভাবে দিচ্ছে আমি কিছুই জানতাম না। আমি এখানে শুধুমাত্র হোয়াটসঅ্যাপে ট্যুর প্ল্যানের দুইটা ক্ষুদেবার্তা পেয়েছি।

এ বিষয়ে ট্যুর কমিটির সদস্য সচিব আবু ওবায়দা রাহিদ বলেন, মায়ানমার সীমান্তে বিরোধের কারণে ট্যুর করা সম্ভব হয়নি। এখানে শিক্ষকরা বিভিন্ন ব্যক্তিগত কারণে যেতে চায়নি। গত বছরের সুন্দরবন ট্যুর একজন শিক্ষকের নেতৃত্বেই হয়েছিল। এইজন্য এই বছর আমি উদ্যোগ নিয়ে ট্যুর করতে চেয়েছি। ৭ তারিখ টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ রুটে জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আসে। এরপর আমি কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে জেনেছি জাহাজ কক্সবাজার-সেন্টনার্টিন রুটে চলাচল করতে পারবে। কিন্তু সবকিছু ঠিকঠাক করার পর ১১ ফেব্রুয়ারী একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ে ট্যুর স্থগিত করা হয়। আমাকে যখন বিভাগ থেকে টাকার হিসাব চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে তখন আমি স্বাক্ষর ছাড়া উত্তর দিয়েছি কারণ কমিটির অন্য কোন সদস্য স্বাক্ষর করেনি। তাহলে আমি কেন করবো? এই দায় তো আমার একার না। এখন উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে ক্যাম্পাসে বন্ধ রয়েছে। ক্যাম্পাস খোলা হলে শিক্ষার্থীদের টাকার ব্যাপারে আমরা বিভাগের সাথে কথা বলবো।

বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, ট্যুর যাতে সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয় সেইজন্য একটা ট্যুর কমিটি করা হয়েছিল। আমি এখানে সংশ্লিষ্ট ছিলাম না। পরে জানতে পারলাম সদস্য সচিব একাই সব কাজ করছে। বাকি কমিটির সদস্যরা এসব বিষয়ে অবগত নয়। মায়ানমার সীমান্তে বিরোধ জানার পর আমরা ট্যুরের আগে সদস্য সচিবকে সবকিছু অফ রাখতে বললাম। কিন্তু তিনি তা না শুনে কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে সবকিছু বুকিং করে দিয়েছেন। এরপর আমরা একাডেমিক কমিটির সভায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ট্যুর স্থগিত করি। ট্যুরের হিসাব জানার জন্য আমি তাঁকে একটি চিঠি দিয়েছি উত্তর না পেয়ে দুই সপ্তাহ পর আবার চিঠি দেওয়ার পর উনি অসম্পূর্ণ একটি হিসাব অফিস সহকারীর মাধ্যমে আমার কাছে জমা দেন।

তিনি আরও বলেন, ওই চিঠিতে ওনার এবং কমিটির কোন সদস্যের স্বাক্ষর ছিল না। হিসাব থেকে আমরা জানতে পেরেছি একটা ব্যাচের কোন শিক্ষার্থীই ট্যুরের টাকা দেয়নি। আবার অনেক শিক্ষার্থী ৫০০ টাকা জমা দিয়েছে। তাহলে এতো শিক্ষার্থীর টাকা বাকি রেখে উনি কীভাবে সবকিছু বুকিং করলেন? ট্যুরের কোনো টাকা বিভাগে জমা হয়নি। তাহলে বিভাগ কেন এই টাকার দায় নিবে? উনি যদি আমাদেরকে ট্যুরের টাকার আর্থিক হিসেব পুরোপুরি বুঝিয়ে দেন তাহলে আমরা চূড়ান্ত একাডেমিক কমিটির সভায় শিক্ষার্থীদের টাকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিব।

উল্লেখ্য, কুবি উপাচার্য যোগদানের পরেই মার্কেটিং বিভাগে অভিনব উপায়ে এক অনুবিধি যোগ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিয়োগ দেন আবু ওবাইদা রাহিদকে।