এস এম সোলায়মান, নিউইয়র্ক :
মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী ৩ যুগেরও বেশি সময় নিউইয়র্কে টেক্সি চালান কিংবা স্ট্রিট ফল বিক্রি করেন। থাকেন জ্যাকসন হাইটসের একটি রুম শেয়ার বাসায়।
যুক্তরাষ্ট্রে নেই নিজের কোন বাড়ি কিংবা গাড়ি। ভাড়ায় টেক্সি চালিয়ে যা পান। ডাল ভাত খেয়ে আয়ের সবটুকু দিয়েই প্রতিষ্ঠা করেছেন কুমিল্লার ব্রাম্মনপাড়া মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, আবদুল মতিন খসরু মহিলা কলেজ, আবদুর রাজ্জাক হাইস্কুলসহ ৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতি শিক্ষাবর্ষে ৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
কোটি প্রবাসীর আইডল মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরীকে ২১শে পদকসহ রাষ্ট্রীয় সম্মাননার দাবি জানান যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসি বাংলাদেশি ফোরাম।
প্রচার বিমূখ এবং শিক্ষা প্রসারে মহৎ প্রাণ মোশাররফ খান চৌধুরীকে এবার সম্বর্ধনা দিলেন প্রবাসী বাংলাদেশি ফোরাম ইউএসএ।
১৮ অক্টোবর রবিবার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস জুইস সেন্টারে আয়োজিত সর্বদলীয় সম্বর্ধনায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সেক্রেটারি ফখরুল আলম, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার আহসান হাবিব ও সামছুদ্দিন আহমেদ শামীমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সম্বর্ধিত গুনীজন মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী, প্রধান অতিথি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটির সিনিয়র নেতা
সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান ফেরদৌস, আজহারুল হক মিলন, বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা সরকার ইসলাম, ইউনুস সরকার, প্রফেসর মনির হোসেন খান, আবু নাসের, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আবদুর সবুর খান, ইমরান সরকার, সাংবাদিক মোহাম্মদ সাঈদ, রতন মজুমদার, শেখ সিরাজ, হাকিকুল ইসলাম খোকন, মূলধারার নেতা জয়নাল আবেদীন, কাজি আশরাফ হোসেন নয়ন, কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজম, রাব্বি সাঈদ, মোশারফ খানের ছোট ভাই হাবিব খান চৌধুরী, নতুন প্রজন্মের সামান্তা খানসহ নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, , অনুষ্ঠানের শুরুতেই মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরীর জীবনী ও শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেন তিতুমীর কলেজের প্রফেসর নওরোজ।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসি বাংলাদেশিদের দেয়া সম্বর্ধনায় আবেগ আপ্লুত মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বলেন, আমি যা করেছি। তার জন্য কৃতজ্ঞ আমার পরিবারের কাছে। যাদের থেকে আমি দূর প্রবাসে একাকি। কৃতজ্ঞতা আজকের সভাপতি ফখরুল আলমসহ নিউইয়র্কের প্রবাসি ভাই বোন এবং সকল সাংবাদিকদের কাছে। যাদের সার্বিক সহযোগিতা এতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করতে পেরেছি। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা ও গভীর শ্রদ্ধা বুড়িচং ব্রাম্মন পাড়ার প্রয়াত দুই জনপ্রিয় নেতা সাবেক সাংসদ আবদুল মতিন খসরু ও অধ্যাপক ইউনুস সরকারের প্রতি।
দলমতের উর্ধে থেকে উনারা আমার প্রতষ্ঠানগুলোর পাশে দাড়িয়েছেন।
তিনি বলেন, দেশ ও সমাজের জন্য ভালো কিছু করতে সবার আগে লাগে নিজের ইচ্ছে শক্তি। স্থানীয় জনগনের মতামত নিয়ে শুরু করলে মহান আল্লাহই সাহায্য করবেন। সম্বর্ধনা সভায় সকলের উদ্দেশ্যে মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো করতে আমি কারো থেকে আর্থিক কোন সাযায্য নিইনি। মাঝে মাঝে দার দেনা করেছি। কিন্তু রোজগার করে শোধ করেছি। কিন্তু অর্থের চাইতে যে সহায়তা পেয়েছি তা হলো সবার উৎসাহ আমাকে এ কাজে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।
মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বলেন, গত ৩ যুগেরও বেশি সময় আমি আমেরিকায় একাকি বাস করছি। অনেকের প্রশ্ন। স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান গুলো করতেই জীবনের এতটা সময় পরিবার স্বজন থেকে একাকি থাকা।
তিনি বলেন, নিউইয়র্কের রাস্তায় কখনো ফল বিক্রি করেছি। কখনো খাবার বিক্রি করেছি। টেক্সি চালিয়েছি। এতে আমার কোন অসম্মান হয়নি। সৎভাবে জীবন যাপনের জন্য যা করার সবই করেছি। ডাল ভর্তা ভাত খেয়ে আয়ের বাকিটা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৬ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করেছি।
১ টি ডায়বেটিস হাসপাতালের জন্য দেড় কোটি টাকার জায়গা দান করেছি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পুজনীয় আড়াইশ বছরের পুরোনো একটি বটগাছকে রক্ষা করতে দান করেছি। দেশের যেকোন স্থানে অসহায় কাউকে সহায়তার চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, আর্থিক অভাবে আমি সর্বোচ্চ শিক্ষিত হতে পারিনি। কিন্তু আমার শ্রমে গড়া কুমিল্লা ব্রাম্মনপাড়া মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ টি সাবজেক্ট অনার্স ও মাষ্টার্স পাশ করে দেশ ও বিদেশে সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি বলেন, আমার মরহুম শিক্ষক বাবার আদর্শকে লালন করতেই আমি শিক্ষাবিস্তারে কাজ করছি।
নিউইয়র্কে সর্বদলীয় জনাকীর্ণ সম্বর্ধনায় আবেগ আপ্লুত মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বলেন, আমি বেচে না থাকি আপরারা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সেক্রেটারি ফখরুল আলম বলেন, মোশাররফ’ খানকে আমাদের আরো অনেক আগেই আমাদের সম্মাননা ও সম্বর্ধনা দেয়ার প্রয়োজন ছিলো। দেশ গড়ার কারিগর এই প্রবাসীকে রাষ্টীয় সম্মাননা দেয়া এখন সময়ের দাবি।
কমিউনিটি নেতা সরকার ইসলাম বলেন, ২১শে পদক দেয়ার হন্য কুমিল্লা থেকে বার বার আবেদন জানানো হয়েছে। আমি আজকের এই গণসম্বর্ধনা থেকে ২১ শে পদকের দাবি জানাচ্ছি।
প্রধান অতিথি সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, মরে গেলে সম্মাননা নয়। বেচে থাকতেই সম্মাননা দিয়ে সম্মানিত করুন। তাহলে মানুষ উৎসাহিত হবে। দেশ সেবায় আরো বেশি মানুষ এগিয়ে আসবে।
আপনার মতামত লিখুন :