নিজস্ব প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি স্থানীয়দের সঙ্গে ভয়াবহ সংঘর্ষে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আহত হলেও, আশ্চর্যের বিষয়—জুলাই আন্দোলনের দিনগুলোতে যারা নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় ছিলেন, সেই সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও নাহিদদের মতো নেতাদের আজ দেখা যাচ্ছে না। আন্দোলনের উত্তাপে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে সারাদিন মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা নামগুলো আজ যেন হাওয়া হয়ে গেছে।
এ নিয়ে তাদের ওপর শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ দিনে দিনে তীব্র হচ্ছে—“আমরা যখন সবাই জুলাইয়ের জন্য রক্ত দিলাম, জীবন দিলাম, তখন তাদের কোনো সমস্যা ছিল না। অথচ আজ যখন শত শত শিক্ষার্থী হাসপাতালে, তখন তারা জুলাইকে নিজের মধ্যে ছিনিয়ে নিতে ব্যস্ত, কেউবা ব্যস্ত নিজেদের স্বার্থ হাসিলের লড়াইয়ে।”
চবি শিক্ষার্থী নয়ন ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন—
“জুলাই আন্দোলনের সময়ে যারা ফেসবুকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় স্ট্যাটাস দিতেন, টকশোতে দৌড়াতেন, আজ চবির রক্তাক্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে তারা চুপ। কেন এই নীরবতা?”
আরেক চবি শিক্ষার্থী মুন্নি আক্তার বললেন—
“ঢাবির কর্মসূচি হলেই তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে নেতৃত্ব দেন, অথচ চবির শিক্ষার্থীদের দাবি কখনো তাদের মুখে শোনা যায় না। মনে হয়, আমাদের রক্ত শুধু তাদের আন্দোলনের জ্বালানি ছিল।”
এ বিষয়ে জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধা ও চবি শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী আবু হায়দার সীমান্তের কাছে তার মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন—
“যাদের হাতে আজ ক্ষমতা, যাদের কণ্ঠে আজ নেতৃত্বের জোর, তারা কি এই শিক্ষার্থীদের রক্তের কাছে দায়বদ্ধ নয়? দুঃখজনকভাবে, তারা ছিলেন নিশ্চুপ, অনেকে আবার সক্রিয়ভাবে দূরত্ব বজায় রেখে নিজেদের রাজনৈতিক আখের গুছাতে ব্যস্ত ছিলেন। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত তাদের বর্তমান অবস্থান যেন শিক্ষার্থীদের রক্তের প্রতি কোনো ঋণ স্বীকার করে না।
আমার মনে পড়ে যায়, আমরা যখন জুলাই আন্দোলনে আহত হয়ে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলাম, তখন জাতীয় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান গাড়ি নিয়ে নির্ভারভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, আমাদের পাশে দাঁড়াননি। সে কারণে তার প্রতি যেমন ঘৃণা জন্মেছিল, তেমনি আজকের এই নব্য ছাত্রনেতাদের প্রতিও ঘৃণা জন্মেছে—কারণ আমাদের রক্তের দামে তারা ফেম, ক্ষমতা ও পদ পেয়েছে, অথচ আমাদের পাশে দাঁড়ানোর নৈতিক সাহস তারা দেখাতে পারেনি।
অবশেষে বলতে হয়—
“যেই যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবণ।”
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, হৃদয় তরুয়া, ফরহাদসহ চবির শিক্ষার্থীদের ত্যাগ না থাকলে জুলাই আন্দোলন এতটা শক্তিশালী হতো না। কিন্তু আজ সেই অবদানের কোনো মূল্যায়ন নেই। বরং নেতারা এখন রাজনৈতিক পজিশন ও ব্যক্তিগত স্বার্থ আর ক্ষমতা নিয়ে বেশি চিন্তিত।
‘আমাদের রক্তে তাদের ক্যারিয়ার, অথচ আমরা অবহেলিত’
শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনায় এসেছে—জুলাই আন্দোলনের সময় চবির ছাত্ররা মাঠে থেকে প্রতিরোধ গড়েছিল, প্রাণ দিয়েছিল। সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব আজকে যারা নিজেদের নাম প্রতিষ্ঠার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছেন, তারা এই দুঃসময়ে চবির আহত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে একটুও এগিয়ে আসেননি।
একজন আহত শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—
“আমাদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আজ তাদের ক্যারিয়ার। অথচ আমাদের দুঃসময়ে তারা নেই। তারা কেবল ঢাকায় ব্যস্ত—কোন দলে যোগ দেবে, কার সঙ্গে ভাগ বসাবে, সেই হিসাবেই তাদের আগ্রহ।”
চবি ক্যাম্পাসে এখন একটাই আলোচনা—
“জুলাই আন্দোলনের সময় যারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছিল, আজ আমাদের দুঃসময়ে তারা কোথায়?”
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে চবির অবদান সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এখনকার পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, রাজধানী-কেন্দ্রিক আন্দোলনের নেতারা চবিকে কেবল ব্যবহার করেছেন, কিন্তু প্রকৃত অর্থে পাশে থাকার দায়বদ্ধতা নেননি।
উল্লেখ্য যে গত রবিবার (৩১ আগস্ট)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন এক শিক্ষার্থী (ছাত্রী) তাঁর রুমে যেতে দেরি হওয়ায় দারোয়ানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। এ সময় দারোয়ান ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালায় বলে জানা যায়। ঘটনার প্রতিবাদে কয়েকজন শিক্ষার্থী দারোয়ানকে ধরতে গেলে সে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
তবে দারোয়ান স্থানীয় হওয়ায় আশপাশের কিছু স্থানীয় লোকজন উল্টো শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে পড়ে।
আপনার মতামত লিখুন :