মবের ফাঁদে পা না দিয়ে শিবিরের বুদ্ধিদীপ্ত প্রতিবাদ


admin প্রকাশের সময় : অগাস্ট ৬, ২০২৫, ৯:৩৬ পূর্বাহ্ন /
মবের ফাঁদে পা না দিয়ে শিবিরের বুদ্ধিদীপ্ত প্রতিবাদ

নিজস্ব প্রতিনিধি:
গতকাল টিএসসিতে বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের ক্ষোভের মুখে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রদর্শনীতে থাকা একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ছবি সরিয়ে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ‘৩৬ জুলাই: আমরা থামব না’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি আয়োজন করে।

সেই আয়োজনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ছবি থাকায় সেগুলো পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এ নিয়ে শিবিরকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভ তৈরি হয়।

সেখানে বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠন ও শিবিরের সমর্থকেরা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেয়। এ পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়। এমনকি গণ-অভ্যুত্থানের প্রদর্শনীতে থাকা যুদ্ধপরাধী হিসেবে অভিযুক্তদের ছবি সড়িয়ে ফেলা হয়।

ছবি সরিয়ে নেওয়ার পর ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি এস এম ফরহাদ ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আমাদের তিন দিনব্যাপী আয়োজনের ফটোফ্রেমগুলোর একটা অংশ নিয়ে কুতর্ক এবং মব সৃষ্টি করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট। আমাদের জাতীয় ইতিহাসে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ গৌরবজনক অধ্যায়। বাকশাল কায়েম করে মুক্তিযুদ্ধকে প্রথমবারের মতো প্রশ্নবিদ্ধ করেছে শাহবাগের পূর্বসূরিরা। দ্বিতীয় দফায় ২০১৩ সালে শাহবাগ কায়েম করে আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদ বানায় এই শাহবাগ। শাহবাগ ও বাকশালের অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান জারি থাকবে।

তবে গতকাল বিভিন্ন আলোচনা ও সমালোচনার মুখে বিচারিক হত্যাকান্ডের স্বীকার ব্যক্তিদের ছবি সরিয়ে দেওয়ার পর আজকে পূনরায় শিবির গণ-অভ্যুত্থানের প্রদর্শনীতে প্রমাণ ও রেফারেন্সসরূপ কয়েকটি বিবৃতি টাঙ্গিয়েছেন

একটি বিবৃতিতে বেগম খালেদা জিয়ার একটি বক্তব্যকে কোট করে লিখা হয়-

“নিজামী, মুজাহিদ, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, কামরুজ্জামান, কাদের মোল্লা। এদের সবাইকে তারা মিথ্যে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে রেখে দিয়েছে। তারা ভেবেছে তারা স্বাধীনতাবিরোধী বলে তাদেরকে গ্রেফতার করেছে। আমি বলতে চাই আজকে তারা যেই অবস্থা করেছে গোপন চুক্তি করে স্বাধীনতার পরেও যে গোপন চুক্তি করেছে, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি হলো এই আওয়ামী লীগ হলো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি । দেশের বিরোধী শক্তি হলো এই আওয়ামী লীগ। তাই আগে তাদেরকে, তাদেরকে আগে ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই এই দেশ নিরাপদ হবে, স্বাধীন হবে।

বিবৃতিতে অস্ট্রেলিয়ান-ব্রিটিশ ব্যারিস্টার,
জিওফ্রে রবার্টসনের আরেকটি বক্তব্যকে কোট করে পোস্টারে লেখা হয়

“আবদুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় ‘জনগণের ক্ষোভ মেটাতে’। এটা ন্যায়বিচার নয়, এটা ছিল এক প্রকার মব জাস্টিস।”

জিওফ্রে রবার্টসন আরও বলেন

“এটা একটি পক্ষপাতদুষ্ট বিচারপ্রক্রিয়ার অংশ, যেখানে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি।”

জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের অনেককে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে এমন কোনও পুঙ্খানুপুঙ্খ, অকাট্য প্রমাণ নেই যা যুদ্ধাপরাধ প্রমাণ করে। বরং এটি ছিল একটি ভুল সময়ে শুরু করা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত্ত বিচারপ্রক্রিয়া, যেখানে সত্যিকারের ন্যায়বিচার গৌণ হয়ে গিয়েছে।

বিবৃতিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর অনেকে শিবিরের প্রশংসা করে বিভিন্ন পোস্ট করেন।

অনেকের মতে “মবের পক্ষে সাংঘর্ষিক প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বুদ্ধিদীপ্তভাবে নীরব প্রতিক্রিয়ায় সবার মন জয় করলো”।

একরাত আগেই যারা শিশিরকে বিভিন্নভাবে ট্রল করেছিলো তারাই আজকের গণ-অভ্যুত্থানের প্রদর্শনীতে সরিয়ে দেওয়া ছবিগুলোর জায়গায় বুদ্ধিদীপ্ত বিবৃতি দেখে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন।