যোগ্য হয়েও প্লানিং কমিটির সিদ্ধান্তে বাদ সাবেক শিবির সভাপতি


admin প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ২, ২০২৫, ১:৫৩ অপরাহ্ন /
যোগ্য হয়েও প্লানিং কমিটির সিদ্ধান্তে বাদ সাবেক শিবির সভাপতি

কুবি প্রতিনিধি:

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ভাইবায় ডাক পান বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মোবারক হোসাইন। তবে আবেদনের সকল যোগ্যতা পূরণ করে প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশে প্রথমবার ডাক পেলেও পরে ফের ৩১ ডিসেম্বর প্লানিং কমিটি এই প্রার্থীকে ভাইভা পরীক্ষা না ডাকার সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সমালোচনার সৃষ্টি হলে বিভাগকে দায়ী করে প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গত ৪ ডিসেম্বর ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের প্লানিং কমিটি প্রভাষক পদে ২৮টি আবেদন যাচাই-বাছাই করে ২৬ জন প্রার্থীকে যোগ্য বিবেচনা করে সুপারিশ করেন। সে অনুযায়ী ২৬ জন প্রার্থীর ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে কোন অসামঞ্জস্যতা না থাকলেও গত ৩১ ডিসেম্বর বিভাগটির প্লানিং কমিটি পুনরায় আরেকটি সভা আহ্বান করে। সেখানে ২৭ নং প্রার্থী মোবারক হোসাইনের সকল যোগ্যতা পূরণ হলেও বিভাগীয় প্লানিং কমিটি তার প্রার্থীতা বাতিল করে প্রশাসনকে চিঠি দেয়। পরে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার হলে সমালোচনার সৃষ্টি হয় বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে।

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছর, কোনো কারণ না থাকলেও গত ৩১ ডিসেম্বর ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে প্লানিং কমিটির সভা আহ্বান করা যুক্তিযুক্ত হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি শিক্ষক নিয়োগে ইউজিসির নীতিমালা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং ও শর্তের বাইরে গিয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর নতুন করে প্ল্যানিং সুপারিশ পাঠায়। বিভাগ থেকে প্লানিং কমিটি গত ৪ ডিসেম্বর প্রার্থীকে ডাকার সুপারিশ করলেও কোনো কারণ ছাড়া ৩১ ডিসেম্বর নতুন করে না ডাকার সুপারিশ করে। বিষয়টি আমাদেরও বিব্রত করল এবং প্রার্থীকেও বিব্রত করল।

জানা যায়, গত অক্টোবর মাসে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ অথবা ন্যূনতম জিপিএ ৪.০০ থাকতে হবে। তবে ২০০৩ সালে মোবারক হোসাইনে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এর মধ্যে জিপিএ ৩.৯০ পেয়ে পাস করেন।

তবে ২০১০ সালে শিক্ষামন্ত্রনালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এসএসসি পরীক্ষা ২০০১, ২০০২, ২০০৩ এ জিপিএ ৩.০০ প্রথম বিভাগ এবং এইচএসসিতে ২০০৩ সালে ৩.০০ কে প্রথম বিভাগ হিসেবে বিবেচনা করে জিপিএ এর সাথে সনাতন পদ্ধতির সামঞ্জস্য বিধান করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভাষ্য, ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালা ও ২০১০ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন মোবারক হোসাইনের ডাক পাওয়া বৈধ। এছাড়াও শিক্ষক নিয়োগের অভিন্ন নীতিমালায়ও চাকুরির অভিজ্ঞতা থাকলে শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শিথিল করা যাবে বলে বলা হয়েছে। জানা গেছে শিবিরের সাবেক এই সভাপতি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক পদেও চাকরি করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতিমালার ১০ নং সাধারণ নিয়মাবলিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে কর্মরত শিক্ষকগণের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শিথিল করা হইয়াছে। এসএসসি হতে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত এই নিয়ম কার্যকর হবে।’

বিশ্ববিদ্যাল্যের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার আরো বলেন, বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি প্রথমে ২৬ জনের নাম তারা পাঠায়। পরবর্তীতে তারা ১ জন প্রার্থীর ভুলের কথা বললে তখন আমরা প্রার্থীর যোগ্যতা এনালাইসিস করি প্রশাসন থেকে। সেখানে দেখলাম সে প্রার্থী সকল ক্রাইটেরিয়া পূরণ করেছে এবং সে যোগ্য। তবে প্ল্যানিং কমিটি বিষয়টি ইউজিসির নির্দেশনা, আমাদের বিজ্ঞাপন ও শর্তেরবিষয়গুলো বিবেচনায় না এনে উল্টো ৩১ ডিসেম্বর নতুন করে প্ল্যানিং সুপারিশ পাঠিয়ে আমাদেরও বিব্রত করল এবং প্রার্থীকেও বিব্রত করল।

প্লানিং কমিটি প্রথমে সুপারিশ করলে পরে কোনো কারণ ছাড়া ভাইভায় না ডাাকার পক্ষে দাড়ায়, জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের প্রধান ড. শেখ মকছেদুর রহমান বলেন, আমি মুঠোফোনে কথা বলতে পারত না। বিভাগে আসলে কথা বলব। তবে বিভাগে গিয়ে দেখা করতে চাইলে তিনি আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন না।

তবে প্ল্যানিং কমিটির সদস্য মোহাম্মদ মাকসুদুল করিম বলেন, বিভাগ থেকে ভুলের কারণে বিষয়টি জটিল হয়ে গেল। এটি আমাদের জন্য বিব্রতকর। আমরা বিজ্ঞপ্তি অনুসারেই সুপারিশ করে থাকি। সেখানে জিপিএ ৪.০০ এর কথা বলা হয়েছে এবং শর্ত শিথিলের কথা উল্লেখ নাই। আবার অভিন্ন নীতিমালাতে শর্ত শিথিলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১০ এর প্রজ্ঞাপনে ৩.৯০ যেটিকে প্রথম বিভাগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটির বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে হবে।

এই বিষয়ে মোবারক হোসেন বলেন, আমি জিপিএ হিসেব করে আবেদন করিনি। আমি প্রথম বিভাগ হিসেবে আবেদন করেছি। কারণ ২০১০ সালে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এসএসসি পরীক্ষা ২০০১, ২০০২, ২০০৩ এ জিপিএ ৩.০০ প্রথম বিভাগ এবং এইচএসসিতে ২০০৩ সালে ৩.০০ কে প্রথম বিভাগ হিসেবে বিবেচনা করে জিপিএ এর সাথে সনাতন পদ্ধতির সামঞ্জস্য বিধান করা হয়। যা আমার ফলাফল ও আবেদনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এছাড়াও ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালা অনুসারে চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে যেকোনো একটি যোগ্যতা শিথিল করার কথা বলা হয়েছে।