মোঃ শাহীন আলম, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) থেকে:
ফরহাদ হোসেন মুরাদ ২০১৯ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাশ করেন। তারপরে চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ব্যর্থ হওয়ার পরও তিনি থমকে দাঁড়ায়নি। বাবা আলী হোসেনের কিছু অনাবাদি জায়গা রয়েছে জেলার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের ভারত সীমান্তবর্তী নোয়াপাড়া গ্রামে। বর্ষা মৌসুমে এ সকল জমিগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো। শুস্ক মৌসুমে পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে যেতো। যার কারণে এ সকল জমিগুলোতে কোন ফসল হতো না। আশে-পাশের কৃষকরা জমিগুলোতে লেবু ও জাম্বুরার চাষ করতে লাগলো। এ সব দেখে মুরাদও অনুপ্রাণিত হতে লাগলো।
তিনি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ করে তার বাবার অনাবাদি ২০০ শতক জমিতে মাল্টা চাষের সিদ্ধান্ত নিলে এজন্য তিনি স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের দারস্থ হন। কৃষি কর্মকর্তারা জমিগুলো পরিদর্শন করে মাল্টা চাষ হবে না ছাপ জানিয়ে দেন। কিন্তু হার মানার যুবক তিনি নন। প্রশিক্ষণ নিতে তিনি খাগড়াছড়ি, চুয়াডাঙ্গা ও কুমিল্লার ক্যান্টেনমেন্ট গিয়েও কোন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারলেন না। অবশেষে ২০২১ সালে নিজ উদ্যোগে বারি-১ ও ভিয়েতনামের ৬’শত মাল্টা চারা রোপন করলেন ২০০ শতক জমিতে। মুরাদ হারভাঙা খাটুনি খেটে গাছগুলো পরিচর্যা শুরু করলো। এজন্য তিনি নিজ উদ্যোগে বাগানের জন্য বার্মিজ কেচো কম্পোষ্ট সার তৈরি করলেন। আজ মুরাদের সেই মাল্টা বাগানে ফলন হয়েছে ভালো।
ইতিমধ্যে তার মাল্টা বাগান থেকে বেকার যুবকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা আসা-যাওয়া শুরু করেছেন। গত ৬ দিন ধরে তিনি মাল্টা বিক্রি করছেন। প্রথমে পাইকারি বিক্রি করলেও বর্তমানে তিনি ১০০ টাকা কেজি ধরে খুচরা বিক্রি শুরু করেছেন।
ফরহাদ হোসেন মুরাদ বলেন, আমি যখন বাগানটির কার্যক্রম শুরু করি, তখন আমাকে এলাকার লোকজন হতাশ করেছে। অনেকে আমাকে পাগলও বলেছে। কৃষি অফিস থেকে আমাকে কোন প্রকার সহযোগিতা করা হয়নি। আজ আমার বাগানে ফলন হয়েছে ভালো। একমাত্র ভরসা দিতো আমার বাবা আলী হোসেন। বাগানটি তৈরি করতে আমার ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। পরিবার থেকে এক টাকাও আমাকে সহযোগিতা করা হয়নি। বিভিন্নজন থেকে ধারদেনা করে বাগানের শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে।
মুরাদের বাবা আলী হোসেন বলেন, মাল্টা বাগান করতে আমি ছেলেকে এক টাকাও দেইনি। দিয়েছি শুধু অনাবাদি ২০০ শতক জমি। এ জমিগুলোতের বর্ষার মৌসুমে পানি জমে থাকতো এবং শুস্ক মৌসুমে ফেটে চৌচির হয়ে থাকতো। কোন ফসল হতো না। মুরাদ নিজ উদ্যোগেই মাল্টা বাগান তৈরি করেছে। সে সময় এলাকার লোকজন তাকে বিভিন্নভাবে তিরস্কার করতো। আজ মুরাদের সে বাগানের প্রায় ৫ টনেরও উর্ধ্বে মাল্টার ফলন হয়েছে।
চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র ও ওই গ্রামের বাসিন্দা আলহাজ্ব কাজী নজরুল ইসলাম কামাল বলেন, মুরাদ যখন মাল্টা বাগানটি করে, তখন তিনি কোন জায়গা থেকে সহযোগিতা পায়নি। তাকে নানাভাবে তিরস্কার করা হতো। কিন্তু অদম্য মুরাদ হার না মেনে আজ সফল হয়েছে। মুরাদের মাল্টা বাগান থেকে দূর-দূরান্ত থেকে বেকার যুবকরা আসছে এবং তার থেকে পরামর্শ নিচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোবায়ের আহমেদ বলেন, ‘মুরাদের মাল্টা বাগানের সফলতা দেখে আমি নিজেও বিস্মিত। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়ালেখা করেও তিনি আজ একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তার এ উদ্যোগে বেকার যুবকরা অনুপ্রাণিত হবে’।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তানভীর হোসেন বলেন, ‘হার না মানা যুবক মুরাদের কাহিনী শুনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি নিজে গিয়ে তার বাগান পরিদর্শন করবো এবং তাকে সরকারিভাবে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে’।
আপনার মতামত লিখুন :