সময়ের পরিক্রমায় গুণবতীর আশেপাশের বাজারগুলোর যেখানে উন্নতি হচ্ছে সেখানে পিছিয়ে পড়ছে আমাদের প্রিয় গুণবতী বাজার। ব্যবসায়ীক দিকে দিয়ে দিন দিন জমজমাট ভাব কিছুাটা কমছে। এসব বিষয়ে নেতৃস্থানীয়রা নজর না দিলে পথে বসবে অনেক ব্যবসায়ী। নানান সমস্যার এই বাজারে কিছু উন্নতির চেষ্টা হচ্ছে তবে আরো কিছু সমস্যা নির্ধারণ করে সেগুলো উত্তরণের উপায় বের করা দরকার।
গুণবতী-সাতবাড়িয়া সড়ক আজ দীর্ঘদিন যাবত ভাঙ্গাচোরা। এই সড়ক দিয়ে আগে সাঁজনপুর, সাতবাড়িয়ার মানুষ গুণবতীতে বাজার সদাই বা ব্যবসা করতে আসতেন। কিন্ত সড়কের বেহাল দশার কারণে তারা গুণবতী বিমুখ হয়ে এখন অন্য বাজারগুলোর দিকে ঝুঁকছেন। সড়কটির কাজ মাঝপথে আটকে আছে দ্রুত কাজ শেষ হলে আশাকরা যায় আবার এসব অঞ্চলের মানুষ হিসেবে গুণবতী বাজারমুখী হবে।
গুণবতী বাজারের কোনো কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি না হলেও বিওসি রোড পানিতে ভেসে বেড়ায়। আর বৃষ্টি হলে বেহাল ড্রেনেজ সিস্টেমের কারণে পানি নামতে সময় লাগে। বাজারের একটি কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরিতে এলাকার কৃতি প্রকৌশলীদের দ্বারা একটি নকশা করে এ ব্যাপারে কার্যক্রম হাতে নেয়া দরকার। এজন্য এলজিইডি, উপজেলা বা জেলা তহবিল কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্প বা বাজার নিলামের মাধ্যমে টোল আদায় (ডাক তোলা) এর একটি অংশ বাজার উন্নয়নে ব্যবহৃত হওয়ার কথা সেই অর্থ দিয়েও এসব কাজ করা যেতে পারে।
অনেক ক্রেতার অভিযোগ গুণবতীতে সবজির দাম আশেপাশের বাজার থেকে বেশি রাখা হয়। যে বাজারে ক্রেতা ১টাকা কম পাবে ক্রেতা সে বাজারের দিকেই ঝুঁকবে৷ এজন্য গুণবতীর সবজি ব্যবসায়ীদের সাথে সভা করে যতটা কমে পণ্য বিক্রি করা যায় সেব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে আসা দরকার। কেননা, যদি আশেপাশের বাজার থেকে কম দামে পণ্য পাওয়া গেলে বাড়তি ক্রেতার মাধ্যমে দিন শেষে আমাদের বাজারের ব্যবসায়ীরাই উপকৃত হবে। তাছাড়া গুণবতীতে তাজা সবজির জন্য বিষ্ণুপুর, ময়ুরপুর, আকদিয়া এলাকা বেশ পরিচিত। এসব এলাকার তাজা সবজি গুণবতী বাজারে নিয়মিত আসলে ক্রেতা সংখ্যাও বাড়বে।
ফেরি করে মাছ বিক্রির কারণে গুণবতীর বাজারের মাছ ব্যবসা একেবারে স্থিমিত হয়ে আছে। একজন ক্রেতা মাছ কেনার জন্য বাজারে আসলে উনি কেবল মাছই কিনবেনা অন্য অনেক পণ্য কিনে এতে বাজারের ব্যস্ততা বাড়ে। কিন্তু ফেরি করে মাছ বিক্রি করলে কিছু সংখ্যক মাছ ফেরিওয়ালা ও ক্রেতারা সুবিধা পেলেও বাজার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। গুণবতীতে যারা মাছ ফেরি করে তারা আমাদের গুণবতীরই সন্তান। ফেরি করে মাছ বিক্রির ক্ষেত্রে দুইটা আলাদা ক্যাটাগরি করা যেতে পারে৷ যেমন – মাছ ফেরিওয়ালারা রুই, সামুদ্রিক মাছ ও বড়ো চিংড়ি বিক্রি করতে পারবেননা। তাছাড়া অন্যান্য মাছ তারা অনায়াসে বিক্রি করবেন। বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা সব ধরণের মাছ বিক্রি করতে পারবেন।
সরকারি বিভিন্ন বাজারে বহুতল সবাজি, মাছ-মাংশের বাজার করেছেন। একজন নেতার মাধ্যমে জেনেছিলাম গুণবতীতেও এমন একটি করতে চেয়ছিল কিন্তু ভূমির লিজ জটিলতায় তা করা যায়নি। ভূমি জটিলতা কাটিয়ে এমন একটি বাজার ভবন করা গেলে গুণবতী বাসীর জন্য মঙ্গলকর হবে৷ তাছাড়া গুণবতী মাছ ও সবজি বাজারের শেডগুলো সংস্কার করা দরকার।
গুণবতী বাজারে প্রতি বৃহস্পতিবার গোরুর হাট বসানো গুণবতীবাসীর অনেক আগের দাবি। শুক্রবার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান থাকায় প্রতি বৃহস্পতিবার গোরুর হাটে অনেক পশু বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাছাড়া হাট কেন্দ্রিক পশু বিক্রিতে গুণবতীর অনেক গোরু খামারি, পালনকারী, গোরু পালনের উপকরণ বিক্রির ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবে। গোরুর হাটে গোরু কেনার জন্য আশেপাশের অনেক এলাকার মানুষ গুণবতী বাজারমুখী হবে। এতে বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবে।
গুণবতীতে মানসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার চেম্বার, কিছু সাধারণ পরীক্ষা (এক্স-রে) গুণবতীতে করা গেলে গুণবতীর মানুষ ফেনীমুখী কম হবে। আর ভালো ডাক্তারের চেম্বার থাকলে তো আশপাশের এলাকার অনেক মানুষ আসবে৷ যেমন আমার নিজের দেখা সাঈদা বিলকিসকে দেখাতে নিয়মিত বক্সগঞ্জ থেকে রোগী আসতো। এভাবে চোখের ডাক্তারের চেম্বার থাকলে শিলরীর মতো গুণবতীতেও আশেপাশের এলাকার রোগী আসতে শুরু করবে। তাছাড়া গুণবতীর উদ্যোক্তার চাইলে এটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। যা আশপাশের অন্যান্য এলাকায় নেই৷
বাজারের ব্যবসা জমজমাট করতে প্রয়োজন মানুষের সমাগম বাড়ানো। আর সমাগম বাড়াতে গুণবতী কেন্দ্রিক বিভিন্ন এনজিও, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় গুণবতী বাজার ও তার সংলগ্ন হতে হবে। কিন্তু সম্প্রতি লক্ষ্য করলাম ‘কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২’ এর জোন অফিস গুণবতী বাজার থেকে সরিয়ে বাজার থেকে প্রায় কিলো খানেক দূরে স্থাপন করা হয়েছে। এতে কেবল বিদ্যুতের সমস্যা নিয়ে আসা মানুষগুলো বাজারেমুখি কম হবে যা বাজারের ব্যস্ততা হ্রাস করবে।
তাছাড়া গুণবতী বাজারের ক্রেতামুখী করতে বাজারের পণ্যের বৈচিত্র্যতা আনতে হবে যা আশেপাশের বাজারে পাওয়া যাবেনা বা ফেনীতে পাওয়া যায় এমন পণ্য গুণবতীতে থাকলে মানুষ গুণবতী বাজার মুখী হবে। ব্যবসায়ীরা মানসম্মত পণ্য ও কিছুটা ছাড়ের মাধ্যমে ব্যবসা করলে মানুষ গুণবতী বাজারমুখী হবে।
গুণবতী বাজার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সবচেয়ে বড়ো বাজার। গুণবতীরবাসীর ব্যাংকিং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সারা দেশের মধ্যে অন্যতম যা জনতা ব্যাংকের বার্ষিক রিপোর্টে উঠে এসেছে। গুণবতী বাজার আমাদের গর্বের। এই গৌরবের বাজারটি টিকিয়ে রাখতে ও এর উন্নতির লক্ষ্যে প্রস্তাবিত উদ্যোগগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।